রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) সংবাদদাতা ঃ নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ভরণ-পোষন দাবি করায় ও দাবিকৃত যৌতুকের টানা না দেয়ায় পাষন্ড স্বামী ও শশুর ঘরের ভেতর আটকে রেখে শারমিন আক্তার (২০) নামে এক গৃহবধূর হাত-পা ভেঙ্গে দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয়, ওই গৃহবধুর পুরো শরীর দিয়ে কোদালের গোড়ালি দিয়ে থেতলে দেয়া হয়। পরে পুলিশ গৃহবধুকে উদ্ধার করে। গত বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার মুড়াপাড়া ইউনিয়নের দড়িকান্দি এলাকায় ঘটে এ ঘটনা। বর্তমানে গৃহবধূ শারমিন আক্তারকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
গৃহবধূ শারমিন আক্তার কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব থানার ভৈরব গ্রামের সাহিদ মিয়ার মেয়ে। বর্তমানে সাহিদ মিয়া ৪ মেয়ে, দুই ছেলে স্ত্রীকে নিয়ে রূপগঞ্জ উপজেলার ব্রাম্মনগাঁও শহিদুল্লাহ মাষ্টারের ভাড়াটিয়া।
গৃহবধূর পিতা সাহিদ মিয়া জানান, তিনি বাদাম বিক্রি করে কোন রকম সংসার চালিয়ে আসছেন। গত সাড়ে ৬ বছর আগে উপজেলার মুড়াপাড়া ইউনিয়নের দড়িকান্দি এলাকার মোজাম্মেল হকের ছেলে সেলিম মিয়া (২৫) এর সঙ্গে শারমিন আক্তারকে বিয়ে দেন। অভাব-অনটনের মধ্যে দিয়েও মেয়ের সুখের চিন্তা করে যৌতুক হিসেবে ৩ ভরি স্বর্ণালংকার ও নগদ ৫০ হাজার টাকা প্রদান করেন সাহিদ মিয়া। বিয়ের পর শারমিন আক্তারের সিয়াম নামে আড়াই বছর বয়সের একজন ছেলে সন্তান হয়। সন্তান হওয়ার পর থেকেই স্বামী সেলিম মিয়া ও শশুর মোজাম্মেল হকসহ শশুর বাড়ির লোকজন শারমিন আক্তারকে বিভিন্ন ভাবে জ¦ালা যন্ত্রণা দিয়ে আসছে। গত পাঁচ মাস আগেও মেয়ের সুখের চিন্তা করে যৌতুক হিসেবে জামাই সেলিমকে ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন সাহিদা মিয়া। গত দুই মাস ধরে শারমিন আক্তারকে ফের ৩ লাখ টাকা যৌতুকের জন্য চাপ প্রয়োগ করে আসছিলো শশুর বাড়ির লোকজন। দাবিকৃত যৌতুকের টাকা এনে দিতে না পারায় শারমিনকে সন্তানসহ বিতারিত করে স্বামী সেলিম মিয়া ও শশুর মোজাম্মেল হক।
বৃহস্পতিবার রাতে ভোরণ-পোষনের দাবিতে শিশু সিয়ামকে নিয়ে শশুর বাড়িতে যান শারমিন আক্তার। পরে পাষন্ড স্বামী সেলিম মিয়া ও শশুর মোজাম্মেল মিলে শারমিন আক্তারকে ঘরে বন্ধি করে ফেলেন। এক পর্যায়ে তাকে বেঁধে বাম হাত, দুটি পা ভেঙ্গে ফেলে। পরে কোদালের গোড়ালি দিয়ে পুরো শরীর থেতলে দেয়। স্থানীয় লোকজন গৃহবধূর চিকিৎসার জন্য ডাক্তার পাঠালে ওই ডাক্তারকেও বটি দিয়ে ধাওয়া দিয়ে বিতারিত করে।
খবর পেয়ে রূপগঞ্জ থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) রাশেদের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থল পৌছে নির্যাতনের শিকার শারমিনকে উদ্ধার করে। পুলিশ আসার টের পেয়ে নির্যাতনকারীরা পালিয়ে যায়।
এলাকাবাসী অভিযোগ জানিয়েছেন, আড়াই বছরের শিশু সিয়ামের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে স্থানীয় ইউপি সদস্য আলম হোসেন গৃহবধূ শারমিনের সঙ্গে স্বামী সেলিম মিয়ার মিলিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। তখন ওই ইউপি সদস্য’র সিদ্ধান্ত মানেননি তারা। এছাড়া এলাকার কেউ এসবের প্রতিবাদ করতে গেলে সেলিম ও তার বাবা মোজাম্মেল বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধামকি দেয়। এ জন্য কেউ প্রতিবাদ করতে যায়না। অত্যাচারী ও নির্যাতনকারী স্বামী ও শশুরের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবি করেছেন এলাকাবাসী।
এ ব্যপারে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইসমাইল হোসেন বলেন, এটা একটি অমানবিক বিষয়। এভাবে নির্যাতন করাটা ন্যাক্কারজনক ঘটনা। দ্রুত নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছে।